অনেকেরই আছে কবুতর পোষার শখ। সহজে পোষ মানা এ পাখি কারও কাছে পায়রা, কারও কাছে কপোত, আবার কারও কাছে পারাবত নামে পরিচিত। নিজের সৌন্দর্যের কারণে পাখিটি মানুষের মনে জায়গা করে নেয় খুব সহজেই।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট গ্রামের মো. ফজলু মিয়া (৩০) পেশায় চা বিক্রেতা। প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কোনো পড়ালেখার সুযোগ হয়নি তার। বাড়ির পাশেই বাদাঘাট বাজার। সেই বাজারে আছে তার নিজস্ব চা-স্টল। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকানে চা বিক্রি করাই তার মূল পেশা। সপ্তাহে দুই দিন (বৃহস্পতি এবং রবিবার) বাজারের হাট বসে। এ সময় ফজলু মিয়ার চায়ের দোকানের পাশেই কবুতর বিক্রি করতে আসেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খামারি ও সৌখিন কবুতর পোষা মালিকরা।
আরও পড়ুন: হাওরে পানি আটকে মাছ শিকার, সুনামগঞ্জে বোরো আবাদে শঙ্কা
অনলাইন ব্যবসায় সাফল্য পেতে জেনে নিন ১০ ধাপ
বাজারে কবুতর বিক্রি দেখে আর আলাপচারিতা শুনে ফজলুর শখ হয় কবুতর পালনে। সেই শখ থেকেই ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি প্রথমে দেশীয় জাতের এক জোড়া কবুতর কিনেন ৮০০ টাকায়। কিছু দিন যেতে না যেতেই ওই কবুতর থেকে বাচ্চা হয়, পরে বাচ্চাগুলো বড় হতে হতে তারাও নতুন করে বাচ্চা দেয়।
এভাবে ধীরে ধীরে কবুতরের সংখ্যা বাড়তে থাকে তার। তা দেখে পরিকল্পনা এল খামার করার। যেই ভাবা সেই কাজ। শখ করে কবুতর পোষা শুরু করে বর্তমানে বাড়ির আঙ্গিনায় ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের ছোট্ট এক খামার গড়ে তুলেছেন তিনি।
এখন তার খামারে রয়েছে দেশীয় জাতের পাশাপাশি বিদেশি জাতের হোমার, রেড সিরাজি, গিরিবাজ, ময়ুরপঙ্খী, চায়নাসহ ১০-১৫ জাতের কবুতর। এসব দেশি ও বিদেশি ১০০ জোড়া কবুতরের বর্তমান বাজার দাম লক্ষাধিক টাকা।
ফজলু মিয়া জানান, প্রতি মাসে খাদ্য ও ওষুধপত্রের খরচ পাঁচ-ছয় হাজার টাকা বাদে তার লাভ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি বাদাঘাট বাজারের চায়ের দোকান থেকে আয় দিয়ে তার সংসার চলে স্বাচ্ছন্দ্যে।
শখের কবুতর খামার থেকে এখন তিনি লাখপতি। কবুতরের খামার থেকে প্রতিমাসে যে আয় হয় তা থেকে চায়ের দোকান সম্প্রসারণ করাসহ গড়েছেন দেশি প্রজাতির উন্নত জাতের গরুর খামার।
রপ্তানি বৃদ্ধিতে নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার আশ্বাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অল্প সুদে ঋণ দেয়ার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী
তিনি জানান, খামারে এখন আরও নানা জাতের দামি কবুতর তুলতে চান। বর্তমানে প্রতিদিনই এলাকার কোনো না কোনো সাধারণ ক্রেতা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কবুতর ব্যবসায়ীর সমাগম থাকে তার খামারে।
ফজলু বলেন, শখের বশে কেনা ৮০০ টাকার এক জোড়া কবুতরই ছিল তার মূলধন। বর্তমান খামারে থাকা শতাধিক জোড়া কবুতর তার ওই এক জোড়া কবুতরের মূলধন থেকেই এসেছে। তিনি এ পর্যন্ত নতুন কোনো মূলধন বিনিয়োগ করেননি। কবুতরের লাভ থেকেই গরুর খামারে এনেছেন চারটি দেশীয় উন্নত জাতের গরু। যেগুলোর বাজার মূল্য এখন প্রায় ৪ লাখ টাকার ওপরে।
খামার দেখাশোনায় কোনো কর্মচারী নেই। দিনের বেলায় খাদ্য সরবরাহ করে থাকে ফজলুর স্ত্রী। আর চা বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে তিনিও কবুতর আর গরুর খামারে সময় দেন।
কোনো কবুতর অসুস্থ হয়েছে কি না তা নিজেই চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেন ফজলু। তিনি বলেন, কবুতরের রোগ বালাই শীতকালে দেখা দিলেও অন্যান্য ঋতুতে খুব একটা দেখা যায় না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠা কবুতরের রোগ বালাই তেমন হয় না।
তরুণ ও নারী উদ্যোক্তাকে বিজনেস ইনকিউবেশন সুবিধা দেবে বিসিক
ফজলু জানান, কবুতরের পাশাপাশি এখন গরুর খামার করায় তার খরচের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কয়েক দিন আগে এনজিও সংস্থা আশা থেকে এক লাখ টাকা ঋণ তুলেছেন।
বাদাঘাট বাজারের পল্লী চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘চা বিক্রেতা মো. ফজলু মিয়া একজন পাখি প্রেমিক মানুষ। তিনি ক্ষুদ্র আকারে কবুতরের খামার করে এখন সফল খামারি হয়েছেন। এ কবুতর খামার থেকে এখন তিনি একজন সফল গরুর খামারিও।’